Bengali Story

রোহিণী

মেয়ের নাম রেখেছিল রোহিণী কেন যেন এই নামটাই প্রথম মনে হয়েছিল দিশারীর বাড়িতে নিয়ে আসার পর যখন সবাই নানানামে তাকে ডাকতে আরম্ভ করল, চুপ করেছিল দিশারী সে বাড়ি ফেরার পথে ঠিক করেছিল কী নাম হবে তার মেয়ের এবং কেন কিন্তু কাউকেই সেকথা বলল না ইস্কুলে ভর্তি হবার দিন অতনুকে বলল, আমি কিন্তু তাতাইএর ইস্কুলের নাম ঠিক করে রেখেছি ডাকনাম যা হোক 

অতনু অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, সে কী? ওর নাম তো দীপশিখা সবাই জানে তুমি হঠাৎ নাম বদলে দেবে কেন? তা কি হয়? এতে ওর অনেক অসুবিধা হবে

দিশারী বলল, কিচ্ছু হবে না ডাকনামটা থাকুক, ভালো নামটা বদলে দেব 

কী সেই নাম?

রোহিণী 

সেই বোস পুরনো নাম? আজকের দিনে মেয়েদের কত আধুনিক নাম চলছে তুমি সেই কবেকার মান্ধাতার আমলের, শকুন্তলা, মনোরমা, বসুধাএইসব নামের মতো রোহিণী ঠিক করেছ শুনে মেয়ে না খেপে যায়!

দিশারী বলল, না, কোন সমস্যা নেই নাম নিয়ে মাথা ঘামায় না

সেদিনই স্কুলে ভর্তির সময় রোহিণী নামটি বলার সঙ্গে সঙ্গেই স্কুলেরও টিচার একবার দিশারীর দিকে তাকিয়েছিল তারপর খুব নিচু গলায় প্রশ্ন করেছিল, আর কোন নাম নেই ওর?

কেন? ঘাড় ঝাঁকিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছিল দিশারী

তিনি বললেন, না, আমার কোন ইসু নেই তবে আজকাল এমন নাম তো চোখে পড়ে না

তো

না না আপনি মাইন্ড করবেন জানলে বলতাম না বলে নিজেকে সংযত করলেন টিচার 

দিশারি বলল, রোহিণী একটি নক্ষত্রের নাম যে সমস্ত সৌন্দর্যের প্রতীক, যার সঙ্গে কৃষ্ণের জন্মক্ষণও জড়িয়ে, সে প্রগতির প্রতীক নিরাপত্তা প্রদায়ী আলোকপুঞ্জ

দিশারী বুঝতে পারে রোহিণীর অসুবিধা হচ্ছে হয়ত বন্ধুদের কাছে সে বলতে পারে না তার বাবা কোথায় বা বন্ধুরা বুলি করার ছলে তাকে এমন ইঙ্গিত করে যা তার পছন্দ নয় দিশারী লক্ষ করে দিন দিন রোহিণী একা হয়ে যাচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে মেশে না, একা একা ঘুরে বেড়ায়, খেলাধুলোয় কোনও আগ্রহ নেই

এই প্রথম দিশারীর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অতনু সে একটা সামান্য নাম ভেবেছিল এত কিছু তলিয়ে ভাবেনি সামনের টিচার তাতাইএর দিকে তাকিয়ে বলেছিল, ওয়েলকাম রোহিনী 

(২)

জগুবাবু বাজারে কাকদের এতোই ব্যস্ততা তাই এই বাড়িতে কোনদিন কাক আসেনি সামনের পেয়ারা গাছটাতেও এসে ভুলক্রমেও বসেনি বাড়ির সব নোংরা ঝাড়ুদার মেয়ে রোজ নিয়ে যায় এমনি একটা বাড়ি, বাজারের কিছুটা দূরে দেবেন্দ্র ঘোষ রোডের একপাশে এটাই দিশারীর বাপের বাড়ি কোনও একসময় একান্নবর্তি পরিবার ছিল, এখন পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে একমাত্র দিশারীর বাবা এই বাড়ি ছেড়ে যাননি তার একটিমাত্র কারণ, অবসরে দুপা হেঁটে বাজার যেতে পারবেন কারোর উপর নির্ভর করতে হবে না বাকিরা কেউ নিউটাউন, বারাসাত, উত্তরপাড়া বা বিদেশে নিজের বাড়ি করে চলে গেছে তাদের পরিবার বেড়েছে কলেবর বেড়েছে একমাত্র পুজোর কদিন সবাই এসে হাজির হয় এই বাড়িতে বার্ষিক পুনর্মিলন এটাই গাঙ্গুলি বাড়ির একমাত্র তলানি ঐতিহ্য দিশারী ছোটবেলা থেকে জানে এটাই তার বাড়ি বাড়িটা অনেকদিনের একদিকে একটা তুলসিমন্ডপ, পাশে ঠাকুরদালান, আর অন্যদিকে দোতলাবাড়ির ঘরবিন্যাস পুজোর সময় এসে এখন অনেককেই বাইরের হোটেলে থাকেতে হয় জায়গা সংকুলানের খু অভাব দিশারী এখানেই বড় হয়েছে আবার এখানেই ফিরে এসেছে বিয়ের সাত বছর পর

অতনু ছিল, আচমকা হৃদযন্ত্রের বেইমানি, বন্ধ হয়ে গেল অসময়ে পাইকপাড়ার ভাড়া বাড়ি ছেড়ে চলে এসে দিশারী বাবার কাছেই উঠেছে মানেই অনেককাল এই সময়ে একদিকে অতনুর দুর্ঘটনা আর দিশারীর  ফিরে আসাতে অনেকটাই দিশেহারা অমরনাথ 

মায়ার মৃত্যুর পর জীবনটা একরকম বদলে গিয়েছিল অমরনাথের প্রতিদিন সকালে জগুবাবু বাজারে যাবার তাড়া দেবার লোকটি নেই সেটা সে টের পেত প্রতি প্রত্যুষে বিছানা ছেড়ে উঠত না আলস্যে গড়িয়ে নিত কিছুক্ষণ ততক্ষণ সে মায়ার কন্ঠস্বর শুনত কী হল, এবার ওঠো বাজারে যেতে হবে যে? ছিল অনেকদিনের অভ্যাস মায়ার মৃত্যু সেই ডাককে শুষে নিয়েছে অনেকদিন  

দিশারী আসায় নতুন অভ্যাসে কেমন যেন বদলাতে শুরু করেছে অতনু যে এত অল্প বয়সে চলে যাবে কে কল্পনা করেছিল? অমরনাথ জেনেছিল অতনুর মত সুস্থ্য, সবল, পরিশ্রমী মানুষের হাতে দিশারীকে তুলে দিয়ে সে ভারমুক্ত হয়েছে এখন মনে হয় এভাবে কি ভারমুক্ত হওয়া যায়? জীবন তো ভারাক্রান্ত হবার সচিত্র ইতিহাস যা ভেবেছিল তার উল্টো হল সেদিনের রাতটা মনে পড়ে রাত এগারোটা নাগাদ শুয়ে পড়বে পড়বে করছে অমরনাথ প্রতিদিন ঘুমের আগে তাঁর একটা বই চোখের উপর তুলে পড়া অভ্যাস অক্ষরের উপর চোখ বোলাতে বোলাতেই ঘুম নেমে আসে দশদিক ঘিরে জেগে থাকলে অনেক পুরানো কথা মনে আসে, ঘুমের ব্যাঘাত হয়, অমরনাথ জানে তাই তাঁর সময়ে ঘুমটা একটি জরুরি প্রক্রিয়া সেদিনও তাই ছিল একটি রহস্য উপন্যাসের পাতায় চোখ রেখে শুয়েছে, দিশারীর ফোন বাবা, অতনু নেই 

অতীব নাটকীয় মুহুর্ত অমরনাথ ভেবেছিল, ক্রস কানেক্সন হয়েছে তাই বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করেছিল, কে কে বলছেন?

উল্টোদিকের গলাটা এবার তাঁর চিনতে অসুবিধা হয়নি একলাফে বিছানা থেকে নেমে, ট্যাক্সি ডেকে সোজা পাইকপাড়া তখনতনুর পাড়ার চারদিকে মানুষে মানুষে ভরে গেছে খবরটা ছড়িয়ে গেছে পঙ্গপালের মত অতনু যে পাড়ায় এত বিখ্যাত ছিল অমরনাথের জানা ছিল না ভিতরে ঢুকতে সে দিশারীকে দেখেছিল, বসে আছে একটা চেয়ারে তাকে ঘিরে আছে কয়েকজন মহিলা দিশারী তারপর উদাস চোখে তাকিয়েছিল অতনুর দিকে রোহিণীকে দেখতে পায়নি অমরনাথ 

 

(৩)

দাদু? আমার বাবা কোথায় গেছে তুমি জান?

অমরনাথ রোহিণীর মাথায় হাত দিয়ে বলে, ওই যে বিশাল আকাশ সেখানে 

কেন আমাদেরকে ছেড়ে গেল?

এর উত্তরটা আমি জানি না তুমি বড় হও, জানতে পারবে 

বৃষ্টি পড়ছিল কালো মেঘে আকাশটা ভরেছিল ভোর থেকে প্রথমে ঝিরিঝিরি, তারপর প্রবল বৃষ্টির ফোঁটা এসে আছড়ে পড়ছিল কংক্রিটের উঠোনে সেদিকেই তাকিয়েছিল রোহিণী নাচছিল বৃষ্টির ফোঁটাগুলো, নাচতে নাচতে তাদের শরীর ভেঙে অনুপরমানুতে ধাক্কা খেতে লাগল, ভাঙাগড়ার খেলায় মিহি বাতাস খেলা করছিল দামাল বালকের মতো রোহিণীর মনে হচ্ছিল এই সময় তার পাশে বাবা থাকলে ভালো হয় যাকে সে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টির মধ্যে চলে যাবে জলের টুকরোদের দুহাতে ধরবে আদর করবে, গায়ে মাখবে, তারপর মুখের উপর দুহাত দিয়ে আচলা করে জল বাবার মুখে ছিটিয়ে দেবে

এই একটি প্রশ্নের উত্তর অমরনাথ আজও জেনে উঠতে পারেনি অসময়ে, অকারণে কেন মানুষ এই পৃথিবী থেকে চলে যায়? আর যাবেই যদি তবে তারা আসে কেন?

দিশারী এসে ঘরের মধ্যে ঢোকে রোহিণীর দিকে তাকিয়ে বলে, দাদুকে আবার সেই একই প্রশ্ন করছো? আমি তো তোমায় বলেছি বাবা এখন নেই বাবা ফিরে আসবে

রোহিণী বলল, সেটা আমি জানি কবে, তা তো বলোনি?

দিশারী বলল, বলব, আরও বড় হও

রোহিণী এবার ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল, তোমরা আমাকে খালি বল,বড় হও আমি কবে বড় হবো? কবে আমাকে বলবে? আমি আর কত বড় হব? এর উত্তর তো বলছো না

এবার দিশারী চুপ করে তাকিয়ে দেখে রোহিণীকে রোহিণীর চোখের কোণায় অবিশ্বাসের হাল্কা মেঘ দেখতে পায় দিশারী 

দিশারী বুঝতে পারে রোহিণীর অসুবিধা হচ্ছে হয়ত বন্ধুদের কাছে সে বলতে পারে না তার বাবা কোথায় বা বন্ধুরা বুলি করার ছলে তাকে এমন ইঙ্গিত করে যা তার পছন্দ নয় দিশারী লক্ষ করে দিন দিন রোহিণী একা হয়ে যাচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে মেশে না, একা একা ঘুরে বেড়ায়, খেলাধুলোয় কোনও আগ্রহ নেই বয়সে মনের ভিতরে কোন অবিশ্বাস দানা বাঁধলে মানসিক বিপর্যয়ের লক্ষণ দেখা দেয় অমরনাথও জানে সেই একদিন দিশারীকে বলল, একদিন গল্পের ছলে রোহিণীকে বলে দেওয়া ভাল কীভাবে বলবে দিশারী তাতাইকে ঠিক করতে হবে দিশারী বলল, বাবা তুমি ওকে বুঝিয়ে বল অমরনাথ বলল, আমি বললেও সে তোর কাছেই ফিরে আসবে তোকেই বলতে হবে

দিশারী কোন উত্তর দিল না  

 

()

অমরনাথের ধারণা অতনু নেই তো কী হয়েছে, সে তার স্নেহ দিয়ে, আদর দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে বড় করে তুলবে, বাবার অভাব সে রোহিণীকে বুঝতেই দেবে না যেদিন দিশারী এসে এই বাড়িতে উঠেছে সেই দিন থেকে তার মাথায় কেবলই একটা কথা ঘুরে বেড়িয়েছে, যে করেই হোক সে নিজের হাতে তৈরি করে দেবে নাতনিকে সে যতদিন বেঁচে আছে ততদিন সে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাবে যাতে রোহিণী বড় হয়, ভাল গান করে আর নিজের পায়ে দাঁড়ায় মেয়ের সম্পর্কে তার সঙ্গে অনেকদিন আলোচনা হয়েছে একদিন কথাপ্রসঙ্গে বলেছিল অতনু, আর একটু বড় হোক,আমি ওকে ক্ল্যাসিকাল গানের তালিম দেয়াবো ওর গলায় খুব সুন্দর সুর আছে আপনি কি লক্ষ করেছেন?

অমরনাথ বলেছিল, তা থাকবে না আমার বাবা মিউসিউয়ান ছিলেন, আমি ভালো বাঁশি বাজাতে পারি, ওর মা অল্পবয়সে কতবার গানে পুরস্কার নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ওর জিনে সুর আছে

অতনু বলল, আমার মাও খুব ভালো গান গাইতেন আমাদের রামপ্রসাদী গান গেয়ে ঘুম পাড়াতেন কীর্তন খুব ভাল গাইতেন দেখবেন বড় হয়ে রোহিণী খুব ভাল গাইবে

এর মধ্যে রোহিণী পড়তে বসে অমরনাথ দিশারীকে বলল, আমি জানি আমার বাবা কোথায় তোমরা তো বল্লে না? আমি জেনে ফেলেছি তোমারা জানতে চাও?

দুজনের মুখে কোন কথা নেই অবাক হয়ে একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে রোহিণী বলল, এই পৃথিবীতে নেই মারা গেছে চলে গেছে আকাশে রোহিণী নক্ষত্রর কাছে 

দিশারীর কেমন অপরাধবোধ হল, অমরনাথ নিজেকে এতদিনের মিথ্যেবাদী মনে হল,তবু জিজ্ঞেস করল, কে বলল তোমায়?

রোহিণী বলল, কেন? রসরাজ মিস্টির দোকানের কাকু 

কী বলল ?

জিজ্ঞেস করল, তোমার বাবাকে মনে আছে? কি সুন্দরই না ছিলেন একদম বসন্ত চৌধুরী

আমি বললাম, আমার মনে নেই বাবা তো অনেকদিন বাড়িতে নেই

কাকু বলল, কী করে থাকবে? সে তো অনেকদিন পটল তুলেছে আমি বাড়ি ফিরে গুগুলকে

জিজ্ঞেস করলাম লিখলাম পটল তোলার মানে কি?

গুগুল সঙ্গে সঙ্গে বলল, পটল তোলা মানে মারা যাওয়া তাই জেনে গেছি

দিশারী অমরনাথ আবার চোখাচোখি করল তারপর ঘর থেকে চলে গেল অমরনাথ

রোহিণী প্রশ্ন করল, আচ্ছা মাম্মাম, বসন্ত চৌধুরী কে?

তিনি বিখ্যাত সিনেমা আর্টিস্ট ছিলেন  

তাকে কী খুব সুন্দর দেখতে?

হ্যাঁ, খুব 

আমার বাবাকে কি খুব সুন্দর দেখতে ছিল?

হ্যাঁ, তোমার বাবাকে খুব সুন্দর দেখতে ছিল বলে দিশারী মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় রোহিণীর 

সেই থেকে রোহিণী বাবার চেহারা মনে মনে এঁকেছে, বাবা তার সুন্দর দেখতে, সুন্দর দেখতে হলে সবাই তাকে মনে রাখে, মনে রাখলেই তার খ্যাতি হয় রাস্তায় হেঁটে গেলে তাকে সবাই চিনতে পারে, তাকে অনেকে সমীহ করে, দোকানে গেলে আগে দোকানদার তার দিকে এগিয়ে আসে এসবই সে লক্ষ করেছে অমরনাথের বা দিশারীর সঙ্গে বাজার, দোকান যাতায়াতের সময়ে 

বৃষ্টি পড়ছিল কালো মেঘে আকাশটা ভরেছিল ভোর থেকে প্রথমে ঝিরিঝিরি, তারপর প্রবল বৃষ্টির ফোঁটা এসে আছড়ে পড়ছিল কংক্রিটের উঠোনে সেদিকেই তাকিয়েছিল রোহিণী নাচছিল বৃষ্টির ফোঁটাগুলো, নাচতে নাচতে তাদের শরীর ভেঙে অনুপরমানুতে ধাক্কা খেতে লাগল, ভাঙাগড়ার খেলায় মিহি বাতাস খেলা করছিল দামাল বালকের মতো রোহিণীর মনে হচ্ছিল এই সময় তার পাশে বাবা থাকলে ভালো হয় যাকে সে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টির মধ্যে চলে যাবে জলের টুকরোদের দুহাতে ধরবে আদর করবে, গায়ে মাখবে, তারপর মুখের উপর দুহাত দিয়ে আচলা করে জল বাবার মুখে ছিটিয়ে দেবে বৃষ্টির মধ্যে গেয়ে উঠবে,মম চিত্তে,নিতি নৃত্যে, কে যে নাচে, তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ নিজের মধ্যে নেচে ওঠা তো কেউ শেখায় না নাচের ইস্কুল শুধু নাচতে শেখায় মনের ভিতর, সমস্ত শরীর দিয়ে নাচতে কি শেখায়

রোহিণীর মনে আছে, ছোটবেলায় দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে ম্যালের উপর হাঁটছিল রোহিণী আচমকা গোটা ম্যাল ঘন মেঘে ভরে গিয়েছিল ঠান্ডা হাওয়া এসে ঝাপটা মেরেছিল চোখে মুখে গরমের সোয়েটার, ভেদ করে ঠান্ডা এসে লাগছিল বুকে আর তখনই সে ভিতরে ভিতরে নেচে উঠেছিল ম্যালের উঠোনে মেঘের মধ্যে, ঠান্ডার ঘেরাটোপে, বাবার মার হাত ছেড়ে নাচতে শুরু করেছিল নাচতে নাচতে একটু দুরেই চলে গিয়েছিল রোহিণী বাবা ভয়ে ডেকেছিল, রোহিণী, হাত ছেড়ে কোথায় গেলে তুমি?

রোহিণী মেঘের মধ্যে দিয়ে, শীতের মধ্য দিয়ে,উত্তর দিয়েছিল, আমি নাচছি, এখানেই বাবা বোধহয় শুনেছিল তাই অপেক্ষা করেছিল মেঘ সরে যাবার বেশীক্ষণখানে থাকে না মেঘ একটু পরে যখন আবার রোদে ঝলমল করে উঠল ম্যাল, তখনও সে নেচে চলেছে আজও একবার বাইরে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে হল উঠোনের মধ্যে নাচতে ইচ্ছে হল পারল না এখানে লুকিয়ে পড়ার জায়গা নেই, ঠাণ্ডা নেই, মেঘ নেই, আরকোথায় তুমিবলে ডেকে ওঠার তো বাবা নেই!